এরিক অ্যাডামসের ভবিষ্যৎ কী রিপাবলিকান দলে?


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 19-02-2025

এরিক অ্যাডামসের ভবিষ্যৎ কী রিপাবলিকান দলে?

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস বর্তমানে এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক ভবিষ্যতের মুখোমুখি। একসময়ের জনপ্রিয় এই নেতা এখন কঠিন সময় পার করছেন। কারণ তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার গুঞ্জন তাকে ক্রমশ রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করে তুলছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বলছে, যদি অ্যাডামস পুনরায় মেয়র হতে চান, তবে তার সবচেয়ে বড় সুযোগ হতে পারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন নিয়ে রিপাবলিকান দলে যোগ দেওয়া। এ অবস্থায় অনেকেই মন্তব্য করেছেন- এটি কি আদৌ বাস্তবসম্মত নাকি এটি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ ঘোষণা। 

বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকার ভেতরে এবং বাইরে বিশাল পরিবর্তন আনতে চাইছে। তার শাসনামলে শুল্কনীতি, আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও ফেডারেল সরকার সংস্কারে নজিরবিহীন পরিবর্তন আনার চেষ্টা স্পষ্ট। কিন্তু ট্রাম্পের নজর নিউইয়র্ক সিটির দিকেও পড়তে পারে, যেখানে তিনি একজন সহযোগী মেয়র খুঁজছেন, যিনি তার প্রশাসনের নীতিগুলো বাস্তবায়নে সাহায্য করবেন। যদি অ্যাডামস ট্রাম্পের সঙ্গে মিলে অভিবাসীদের বিতাড়ন, যানজট কর বাতিল এবং নিউইয়র্কের মত উদারনৈতিক শহরে মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন (মাগা) আন্দোলন চালানোর মতো সিদ্ধান্ত নেন, তবে নিউইয়র্কের রাজনৈতিক মেরুকরণ আরো তীব্র হতে পারে।

অ্যাডামসের অতীত ঘাটলে দেখা যায়, তিনি ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে রিপাবলিকান দলে যোগ দিয়েছিলেন এবং নিউইয়র্ক পুলিশের অপরাধ দমন নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তী সময়ে তিনি আবার ডেমোক্র্যাট দলে ফিরে আসেন, তবুও তার রাজনৈতিক আদর্শের পরিবর্তন এবং সুযোগ বুঝে দিক বদলানোর প্রবণতা তাকে একজন কৌশলী রাজনীতিক হিসেবে উপস্থাপন করে। বর্তমানে ডেমোক্রেটিক দলে তার জনপ্রিয়তা কমে গেছে, তহবিল সংগ্রহেও তিনি পিছিয়ে পড়েছেন এবং সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে তিনি তৃতীয় বা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প যদি অ্যাডামসকে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেন, তাহলে এটি নিউইয়র্কের রাজনীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন বয়ে আনতে পারে। অ্যাডামস যদি রিপাবলিকান দলে যোগ দিতে চান, তবে তাকে উইলসন-পাকুলা আইনের মাধ্যমে রিপাবলিকান প্রার্থী হতে পারেন, যা নির্ভর করবে নিউইয়র্কের পাঁচটি রিপাবলিকান কাউন্টি কমিটির অনুমোদনের ওপর। যদিও বর্তমানে রিপাবলিকান নেতৃত্ব অ্যাডামসকে সমর্থন দিতে ইচ্ছুক নয়, তবে ট্রাম্প চাইলে সহজেই এই সমীকরণ বদলে দিতে পারেন।

কিন্তু এখানেই প্রশ্ন ওঠে-নিউইয়র্ক সিটির একজন মেয়র হিসেবে অ্যাডামস যদি ট্রাম্পের সহযোগী হয়ে ওঠেন, তবে এটি তার জন্য কতটা লাভজনক হবে? নিউইয়র্কে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা খুবই কম। কারণ ২০২৪ সালের নির্বাচনে ৭০ ভাগ ভোটার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছিলেন। তাছাড়া নাগরিক অধিকার নেতা আল শার্পটন ও অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইতিমধ্যেই বলেছেন, যদি অ্যাডামস রিপাবলিকান হন, তাহলে তার মূল ভোট ব্যাংক-কর্মজীবী কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় তাকে ছেড়ে যাবে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাডামস আসলে এক কঠিন দোটানার মধ্যে পড়েছেন। তিনি যদি ডেমোক্র্যাট দলে থেকে লড়াই চালিয়ে যান, তবে বর্তমান দুর্নীতির অভিযোগ ও তার জনপ্রিয়তার পতন তাকে আরো পিছিয়ে দেবে। আবার যদি তিনি রিপাবলিকান হিসেবে দাঁড়ান, তবে নিউইয়র্কের মতো একটি উদারপন্থী শহরে তার জয় পাওয়া প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে ট্রাম্প যদি অ্যাডামসকে মেয়র হিসেবে চান, তাহলে তিনি বিভিন্ন ফেডারেল প্রকল্পের মাধ্যমে নিউইয়র্কে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন। আরো পুলিশ নিয়োগ, পেন স্টেশন ও হাডসন ইয়ার্ডস উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ এবং মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠনে বড় ধরনের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতা বলছে, অ্যাডামসের অবস্থান বর্তমানে এতটাই দুর্বল যে, তিনি আর মেয়র হওয়ার দৌড়ে নেই। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে তিনি মাত্র ৯ ভাগ ভোট পাচ্ছেন, যেখানে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ৫৮ ভাগ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। এমনকি নিউইয়র্ক সিটির ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৩ ভাগ তাকে আবার মেয়র হিসেবে দেখতে চান। বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যাডামস যদি ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলান, তবে এটি তার রাজনৈতিক কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার শামিল হবে। নিউইয়র্কের অধিকাংশ মানুষ ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিবিরোধী এবং কেউই এমন একজন মেয়র চান না, যিনি ট্রাম্পের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করবেন। ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফরিস ও অন্যান্য সিনিয়র নেতারা ইতিমধ্যেই নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুলের সঙ্গে আলোচনা করছেন অ্যাডামসকে সরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে।

সংক্ষেপে বলা যায়, এরিক অ্যাডামসের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ এবং ট্রাম্পের সঙ্গে তার ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা তাকে নিউইয়র্কের ভোটারদের চোখে আরো বিতর্কিত করে তুলেছে। একসময় নিউইয়র্কের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে বিবেচিত এই রাজনীতিবিদ এখন তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে আছেন। তবে বাস্তবতা হলো-তার পক্ষে এই লড়াই জেতা প্রায় অসম্ভব। অ্যাডামসের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। তিনি যদি রিপাবলিকান দলে যোগ দেন, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে কিছু সুবিধা পেতে পারেন, কিন্তু একই সঙ্গে তার রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর ঝুঁকিও রয়েছে। নিউইয়র্কের মতো প্রগতিশীল শহরে ট্রাম্পের ছায়ায় থেকে জয়ী হওয়া প্রায় অসম্ভব।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)