ফেডারেল অনুদান স্থগিতাদেশ ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশ দিলেন বিচারক


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 12-02-2025

ফেডারেল অনুদান স্থগিতাদেশ ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশ দিলেন বিচারক

রোড আইল্যান্ডের ফেডারেল বিচারক জন ম্যাককনেল ট্রাম্প গত ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার ট্রাম্প প্রশাসনকে তার আদেশ অনুসরণ করে ফেডারেল অনুদান অবিলম্বে মুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তার সঙ্গে বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন অবিলম্বে ফেডারেল অনুদানের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেয়। আদালতে ২৩টি ডেমোক্রে‍টিক অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরা অভিযোগ করেন যে, প্রশাসন গত ৪ ফেব্রুয়ারির আদালত কর্তৃক দেওয়া আদেশ ট্রাম্প প্রশাসন কার্যকর করছে না। প্রশাসন আদালতের আদেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করছে না। বিচারক জন ম্যাককনেল তার আদেশে উল্লেখ করেন যে, ফেডারেল তহবিল আটকে রাখা ‘সম্ভাব্য অসাংবিধানিক’ এবং এটি যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ করে চলেছে। সোমবার দেওয়া সংক্ষিপ্ত আদেশে, ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বিচারক জন ম্যাককনেল ট্রাম্প প্রশাসনকে নির্দেশ দেন যে, তিনি চূড়ান্তভাবে ফান্ড স্থগিতাদেশ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত প্রশাসন যেন কোনো ফেডারেল অনুদান স্থগিত না রাখে।

বিচারক স্পষ্ট করে বলেন যে, যেসব অর্থ আটকে রাখা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইন-প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বে প্রণীত ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড জবস অ্যাক্ট এর অধীনে বরাদ্দকৃত তহবিল। এছাড়াও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ এবং অন্যান্য সংস্থার জন্য নির্ধারিত অর্থও ফেরত দিতে হবে। বিচারক ম্যাককনেল তার আদেশে উল্লেখ করেন। ফেডারেল তহবিলের ওপর এ ব্যাপক ও বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা আদালতের মতে সম্ভবত অসাংবিধানিক এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য অপূরণীয় ক্ষতি করে চলেছে। গত মাসে অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে নির্দেশ দেয় যে, তারা যেন ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনুদান বিতরণ স্থগিত রাখে। এই নির্দেশের ফলে ব্যাপক আইনি চ্যালেঞ্জ এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। যদিও পরে এই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয়, তবে বিচারক ম্যাককনেল মন্তব্য করেন যে, এই প্রত্যাহার ছিল ‘নামমাত্র’। কারণ হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সামাজিক মাধ্যমে জানান যে, এই নির্দেশ বাতিল করা হলেও পুরো ফান্ড স্থগিতাদেশ বহাল রয়েছে।

এর আগে বিচারক ম্যাককনেল তার আদেশে লিখেছিলেন যে, এই প্রত্যাহার হয়তো কেবল আদালতের এখতিয়ার এড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, তবে এর কার্যকর প্রভাব এখনো বহাল রয়েছে। এই নতুন আদেশ আসে তখন, যখন ২৩টি ডেমোক্রে‍টিক অঙ্গরাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি জেনারেলরা আদালতে অভিযোগ করেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন বিচারকের প্রাথমিক আদেশ মানছে না। এই স্টেটগুলো দাবি করে যে, সরকার এখনো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফেডারেল অর্থ ছাড় করেনি, বিশেষ করে বাইডেনের দুই আইনের অধীনে বরাদ্দকৃত প্রকল্পগুলোর জন্য এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের অনুদান এখনো বন্ধ রয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেলরা আদালতে লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, যদিও এটি কল্পনা করা যায় যে, এতো বড়মাপের ফান্ড স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করতে কিছু সময় লাগবে, তবুও এমন একটি পরিস্থিতি কোনোভাবেই আদালতের আদেশ মানার সমতুল্য হতে পারে না, যেখানে এ স্থগিতাদেশের কারণে বিলিয়ন ডলার মূল্যের ফেডারেল অনুদান এখনো অঙ্গরাজ্যগুলোর কাছে পৌঁছায়নি। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন আদালতে দাবি করেছে যে, তারা সততার সঙ্গে এবং যথাযথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আদালতের নির্দেশ মানতে কাজ করছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের ফেডারেল অনুদান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত শুধু অসাংবিধানিকই নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণের কল্যাণের বিরুদ্ধে একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ। বিচারক জন ম্যাককনেলের স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও প্রশাসনের এ আদেশ মানতে গড়িমসি করা প্রমাণ করে যে, তারা জনগণের স্বার্থের চেয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই ঘটনার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা আবারও প্রকাশ পেল। যেখানে আইনি বাধ্যবাধকতাকে উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়। বাইডেনের প্রশাসনের অধীনে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আটকে রাখা মানে জাতীয় অগ্রগতিকে থামিয়ে দেওয়া, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষের জীবনমানের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ট্রাম্প প্রশাসনের এ নীতিগত স্বেচ্ছাচারিতা শুধু আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞাই প্রদর্শন করে না, এটি জনগণের মৌলিক অধিকারকেও খর্ব করে। আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করার কৌশলগত প্রচেষ্টা স্পষ্টতই গণতন্ত্রবিরোধী এবং আইনের শাসনের জন্য হুমকিস্বরূপ। এখন সময় এসেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন নীতির বিরুদ্ধে জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব আরো দৃঢ় অবস্থান নেবে, যাতে প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত দেশের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে না দেয়।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)