বিডিআর হত্যাকাণ্ডে তদন্ত কমিশন গঠন


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 25-12-2024

বিডিআর হত্যাকাণ্ডে তদন্ত কমিশন গঠন

বহুল আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন করলো অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনাসহ দলের একঝাঁক নেতার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। আর ওই সরকারের কাছে যেসব দাবি ছিল তার মধ্যে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনরায় তদন্ত এবং এ সংক্রান্ত একটি কমিশন গঠন। অবশেষে সে প্রক্রিয়ায় চলে গেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গত ২২ ডিসেম্বর বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে বিজিবি দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত বিজিবি পদক প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তের জন্য তদন্ত কমিশনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানান, বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক এ এল এম ফজলুর রহমানকে সভাপতি করে এ কমিশন গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- সামরিক বাহিনীর দুইজন, সিভিল সার্ভিসের একজন ও পুলিশের একজন কর্মকর্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষক।

এরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, ব্রি. জেনারেল মো. সাইদুর রাহমান বীর প্রতীক (অব.), সাবেক যুগ্ম সচিব মুন্সী আলা উদ্দিন আল আজাদ, সাবেক ডিআইজি ড. এম আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ খান চন্দন।

২৩ ডিসেম্বর সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

জাহাঙ্গীর আলম আশা প্রকাশ করেন, ‘জাতির দীর্ঘদিনের দাবি এই কমিশন গঠন এই মর্মান্তিক ঘটনার স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।’ এর আগে ১৭ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি কমিটি গঠন করা হবে।

পিলখানায় সেই মর্মান্তিক বিডিআর হত্যাকাণ্ড

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, তিন দিনব্যাপী ‘বিডিআর সপ্তাহ’ চলার সময়, পিলখানা সদর দফতরের দরবার হলে বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমান বিজিবি) কয়েকশ সদস্য সশস্ত্র বিদ্রোহ করে। তারা ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার সহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সরকার ও বিডিআর বিদ্রোহীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গ্রেনেড জমা দেয়ার মধ্য দিয়ে বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে। সেই ঘটনায় মোট ৫৮টি মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে একটি হত্যা ও লুটপাটের অভিযোগে, বাকিগুলো বিদ্রোহের অভিযোগে দায়ের করা হয়। হত্যা মামলার বিচারে, ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৪২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া, ২৭৭ জন অভিযুক্ত ব্যক্তি খালাস পান। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৬২ জন বিদ্রোহীকে তিন মাস থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত, বিভিন্ন মেয়াদে এবং প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। 

অন্যদিকে, বিদ্রোহের ৫৭টি মামলায় ৫ হাজার ৯২৬ জন বিডিআর জওয়ানকে চার মাস থেকে সাত বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের করা বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারকার্য যথাযথ হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। এতে প্রকৃত হত্যাকারী ও মাস্টারমাইন্ড আড়াল করা হয় বলে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এরপর থেকেই এ বিষয় পুনঃতদন্ত ও নতুন করে বিচার কার্য করার দাবি ওঠে। 


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)