অবৈধদের ধরতে গির্জা স্কুল হাসপাতালে অভিযান চালাতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 18-12-2024

অবৈধদের ধরতে গির্জা স্কুল হাসপাতালে অভিযান চালাতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগত প্রশাসন, সেন্সিটিভ বা স্পর্শকাতর লোকেশনে যেমন গির্জা, স্কুল এবং হাসপাতালগুলোর আশেপাশে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতার নিষিদ্ধ করার দীর্ঘস্থায়ী নীতিটি প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা করেছে। এই নীতি অনুযায়ী, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা বিশেষ অনুমতি ছাড়া এসব স্থানে গ্রেফতার করতে পারতেন না। একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্প এই নীতি প্রথম দিন থেকেই প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা করেছেন। সূত্রগুলো প্রকাশ্যে এই পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করতে অক্ষম হওয়ার কারণে তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। তবে, এই পদক্ষেপটি আইসিইর ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত অভিবাসীদের গ্রেফতার করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এটি হতে যাচ্ছে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ডিপোর্টেশন অভিযান।

নীতির পটভূমি ও আগের প্রশাসনগুলোর অবস্থান

২০১১ সালে আইসিইর সাবেক পরিচালক জন মর্টনের একটি স্মারকলিপির মাধ্যমে স্পর্শকাতর লোকেশনগুলোতে গ্রেফতার সীমিত করে এই নীতি চালু হয়েছিল। পরবর্তীতে, ট্রাম্প ও বাইডেন প্রশাসনও এই নীতিটি বজায় রেখেছিল। মূলত, এই নীতির উদ্দেশ্য ছিল, যাতে অবৈধ অভিবাসীরা নির্দ্বিধায় কিছু সাধারণ জনগণের স্থান, যেমন হাসপাতাল, স্কুল বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারে এবং এটি বৃহত্তর সম্প্রদায়ের জন্যও উপকারী হবে।

অন্যদিকে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (এসিএলইউ) আইনজীবী লি গেলার্ন বলেন, অভিবাসন কার্যক্রম সবসময় একটি ভারসাম্য প্রয়োজন। অতীতে উভয় দলের প্রেসিডেন্টরা বুঝেছেন যে হাসপাতালে বা স্কুলে গ্রেফতার করা আইনত বৈধ হলেও তা মানবিক বা বুদ্ধিমান পাবলিক নীতি নয়। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাই না যে কেউ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যেতে ভয় পাবে, কিংবা শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হোক শুধুমাত্র অভিবাসন নীতির কারণে।’

আইসিইর নতুন ক্ষমতা এবং সম্পর্কিত উদ্বেগ

নতুন নীতি অনুযায়ী, আইসিই এজেন্টরা এখন স্পর্শকাতর লোকেশনগুলোতে গ্রেফতার সীমিত করে লোকেশনে গ্রেফতার করার অনুমতি পাবে, যদি সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা বা সন্ত্রাসী ঘটনা, কোন বিপজ্জনক অপরাধী অথবা জরুরি শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, তবে এজন্য তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন। যদিও এক্ষেত্রে অনুমোদন পাওয়ার পর তারা গ্রেফতার করতে পারবে, জরুরি পরিস্থিতি হলে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে পারবে এবং পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম সময়কালে ২০১৭ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৬৩টি পরিকল্পিত এবং পাঁচটি জরুরি গ্রেফতার সম্পন্ন হয়েছিল, যার মধ্যে বেশিরভাগই স্পর্শকাতর লোকেশনগুলোর আশেপাশে ছিল।

ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা ঘোষণার পর, অনেক গির্জার নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন যে, অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়া তাদের জন্য বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করবে, বিশেষত যদি নতুন নীতির ফলে আইসিই এজেন্টরা সরাসরি গির্জার মধ্যে গ্রেফতার অভিযান চালাতে সক্ষম হন। আরিজোনার এক গির্জার ডিকন বলেন, অনেক গির্জা এবং ধর্মীয় সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন যে তারা বিপদে পড়বে।

আইসিই এজেন্টদের দৃষ্টিভঙ্গি

একজন সাবেক হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্মকর্তা জানান, স্পর্শকাতর লোকেশনগুলোতে গ্রেফতার সীমিত করে লোকেশন নীতি পরিবর্তন হয়তো কিছু আইসিই এজেন্টদের জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারে, যারা মনে করেন এই নীতি অনেক সময় অপব্যবহৃত হয়েছিল। তিনি বলেন, হয়তো সেই সময়ে এটি একটি ভাল নীতি ছিল, কিন্তু এখন এটি আর প্রয়োজনীয় নয়।

অতএব নতুন নীতি কার্যকর হলে, এটি অনেক অভিবাসী যাদের গির্জা বা অন্য স্পর্শকাতর লোকেশনগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার মাধ্যমে বহিষ্কৃত হওয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে চলছিল, তাদের জন্য আরো বিপদজনক হয়ে উঠবে। ২০১৯ সালে ১৫টি রাজ্যে ৪৬ জন ব্যক্তি গির্জায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, যা একটি ধর্মীয় সংস্থা ‘চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস’ দ্বারা অনুসন্ধান করা হয়েছিল।

সিদ্ধান্তের ভবিষ্যৎ প্রভাব

এই পরিবর্তন আসলে অভিবাসন নীতি এবং আইসিইর কার্যক্রমের প্রভাব অনেক গভীরভাবে চিহ্নিত করবে। যদিও কিছু আইসিই এজেন্ট এই নীতি পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতে পারেন, তবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং অভিবাসী অধিকার কর্মীরা মনে করেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের জন্য নতুন ধরনের বিপদের সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া এই সিদ্ধান্তের আইনগত এবং সামাজিক দিক নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে, বিশেষ করে যদি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আইনগতভাবে আইসিই এর সঙ্গে সহযোগিতা করতে না চায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের পরিকল্পিত এই নীতি পরিবর্তনটি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সংক্রান্ত নীতির এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। যেখানে একটি পক্ষ এই সিদ্ধান্তকে আইসিইর কার্যক্রমের গতি ও ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখতে পারে, সেখানে অন্য পক্ষের জন্য এটি গুরুতর মানবাধিকার ও সমাজিক উদ্বেগের জন্ম দিতে পারে। স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে গ্রেফতার নিষিদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী নীতির প্রত্যাহার, বিশেষত গির্জা, স্কুল ও হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অভিবাসীদের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগের শেষ হতে পারে, যা অনেকের জন্য নিরাপত্তাহীনতার কারণ হতে পারে। এর ফলে বিশেষভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং অভিবাসী অধিকার কর্মীরা উদ্বিগ্ন, কারণ এটি তাদের সুরক্ষা ও মানবাধিকার পরিপন্থী হতে পারে। ফলে এটি একটি সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে আইনগত, সামাজিক এবং মানবিক চ্যালেঞ্জগুলো পরবর্তী দিনগুলোতে প্রভাব ফেলবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)