(চতুর্থ পর্ব)
জুলাই আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংক্ষিপ্ত দেশ সফরকালে চেষ্টা করেছি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত আহতদের খোঁজখবর নেওয়ার, ঘটনার প্রকৃত পটভূমি ও প্রেক্ষাপট জানার। ঢাকা মেডিকেল, পঙ্গু হাসপাতাল, নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউটসহ প্রতিটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছি। জেনেছি, এখনো অনেক আহত রোগীরা শুশ্রূষায় আছে। অনেকের অঙ্গহানি হয়েছে, অনেকে এক চোখ, অনেকে দুই চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। এখনো নিহতদের সঠিক তালিকা বা আহত সবার সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। আহতদের সেবার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলো যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও অর্থের সংস্থান নিয়ে সমস্যা আছে।
আমরা একটি সরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জেনেছি কমপক্ষে ৫০০ আহত রোগীর সেবা দিয়েছে হাসপাতালটি। ২৯ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেছে। হাসপাতাল প্রধান জানিয়েছেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে কপালে নিশানা করে হত্যার জন্য গুলি করা হয়েছে, যাকে সরাসরি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলা যায়। ৫ আগস্টের পূর্বের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে রোগীরা পরিচয় গোপন রেখেছে। সেক্ষেত্রে তাদের খোঁজে গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা অনুসন্ধান করায় রোগীরা নাম-ঠিকানা জানায়নি। এই কারণে ওই সময়ে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাওয়া রোগীর তালিকা প্রণয়নে অসুবিধা হচ্ছে। হাসপাতালটিতে সাত জন গুরুতর রোগী চিকিৎসারত আছে। আমরা তাদের দেখতে গিয়েছিলাম। একজনের মাথার খুলি উড়ে যাওয়ার পর নতুন খুলি লাগানো হয়েছে। এখনো জ্ঞান ফিরে আসেনি। অন্য দুই জনের মাথা থেকে গুলি বের করা হয়েছে। তিন জনের শরীর প্যারালাইসড। দীর্ঘ শুশ্রূষার পর সুস্থ হলেও স্বাভাবিক জীবন হয়তো কখনো পাবে না। নিরস্ত্র এই মানুষগুলো কেন একটি স্বাধীন দেশে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হলো? সভ্য জাতি হিসেবে আমরা কি গর্ব করতে পারি?
জানলাম, সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য একটি তহবিল আছে, সেটি বর্তমানে অধিকাংশ সময় অব্যবহৃত থাকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় এবং সমাজসেবা মন্ত্রণালয় আলোচনা করে তহবলটি হাসপাতালগুলোকে আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করার সুযোগ করে দিতে পারে, মনে রাখতে হবে এই মানুষগুলোর আত্মত্যাগের বিনিময়ে এসেছে পরিবর্তন। এদের জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করা এখন প্রাধিকার হওয়া উচিত।
আমি গত সফরে কয়েকবার ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জ্বালানি, বিদ্যুৎ সংস্কার এবং খেলাধুলা নিয়ে কথা বলেছি। জ্বালানি বিদ্যুৎ সংস্কার বিষয়ে নিজের অবস্থান থেকে দেশের প্রাথমিক জ্বালানি আহরণ এবং উন্নয়নের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া, জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতকে আমলানির্ভরতা মুক্ত করা, বৈষম্য দূর করা,স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রদান বিষয়ে বলেছি। ক্রীড়াঙ্গনেও তৃণমূলে সংগঠনগুলোকে চাঙ্গা করে খেলাধূলোকে বিকেন্দ্রীকরণের পরামর্শ দিয়েছি।
দেখলাম পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্যাস সরবরাহ চেইন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে অকারণে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই দেশে গ্যাস সংকট, গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দেশে চলছে লোডশেডিং, গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে শিল্পকারখানাগুলো আছে সংকটে সেই মুহূর্তে পেট্রোবাংলার উচিত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি নিরসন।
পেট্রোবাংলা দীর্ঘদিন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বার্থ থাকলেও এখন ২০২৫ নাগাদ ৫০ কূপ এবং ২০২৫-২০২৮ পর্যন্ত ১০০ কূপ খননের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। পরিকল্পনার বিস্তারিত জেনে উদ্যোগটাকে প্রশংসা করেছি। সাফল্য নির্ভর করবে বিভিন্ন পর্যায়ের সর্বাত্মক সহযোগিতার ওপর। ২০২৮ না হোক ২০৩০ হলেও কর্মটি ৭৫-৮০ সফলতা জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে।
সফরের শেষদিকে জিটিসিএল আশুগঞ্জ এজিএমএস এবং বিজিএফসিএলের তিতাস গ্যাসক্ষেত্র পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করি। জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে পেট্রোবাংলার কোম্পানিগুলোকে যথাযথ মূল্যায়ন করা জরুরি বলে মনে করি।