রহস্য দানা বাঁধছে দিন দিন


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 20-11-2024

রহস্য দানা বাঁধছে দিন দিন

কেন, কীভাবে জুলাই আগস্ট মাসের স্বল্পতম সময়ে প্রচণ্ড প্রতাপশালী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলো? এ নিয়ে বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না। দিন যতই যাচ্ছে বিশ্বমিডিয়ায় নানা আলোচনা, অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন, সোশ্যাল মিডিয়া গসিপ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের সতর্ক-অসতর্ক বক্তব্য থেকে রহস্য ডানা মেলছে। এতো নির্মম হত্যাকাণ্ড, এতো ধ্বংসযজ্ঞ, এতো কম সময়ে ঘটে যাওয়া অনেক সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা ছাড়া তাৎক্ষণিক হয়েছে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করার কারণ নেই। প্রথমে কোটাবিরোধী আন্দোলন, এরপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, এরপর ৯ দফা হয়ে এক দফা আন্দোলন-এগুলোর নেপথ্যে কোনো সুযোগসন্ধানী শিকারি গোষ্ঠীর সক্রিয় ইন্ধন এবং সহায়তা আছে এটি দিনের মতো পরিষ্কার হয়ে আসছে।

নিঃসন্দেহে স্বীকার করতেই হবে কর্তৃত্ববাদী পতিত সরকারের সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি জনমনে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। সরকারপ্রধান নিজেও সরকারের বিরুদ্ধে চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ পরিস্থিতির গভীরতা এবং ব্যাপ্তি অনুধাবন করতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে, ভুলের পরে ভুল করে সরকারবিরোধী গোষ্ঠীর সাজানো ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের পতন নিজেরাই নিশ্চিত করেছে পতিত সরকার। জুলাই আগস্টে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, সেখানে সরকারি বাহিনী ছাড়াও ষড়যন্ত্রকারীদের কতটুকু ভূমিকা আছে সেটি আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানে বের হোক এটি সময়ের দাবি।

ইদানীং বিগত আওয়ামী সরকার প্রধানের পতন এবং জীবনহানির ষড়যন্ত্র নিয়ে সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা কল্পকাহিনি চলছে। এর অধিকাংশ ভারতীয় কতিপয় ইউটিবার ও মিডিয়া প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে বলে ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারও জানান দিচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের কথা বলা হচ্ছে এ ব্যাপারে কপ সম্মেলনে আল জাজিরার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারেও ড. ইউনূস তুলে ধরেছেন। তবে এসব ইউটিউব প্রচারণার একটি ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোচিত। 

কোনো দেশে স্বৈরশাসন চিরস্থায়ী হয় না। অনির্বাচিত সরকারও দীর্ঘদিন জনআকাক্সক্ষা পূরণ না করে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, কিন্তু সংবিধান সম্মত নয়। গণআন্দোলনে সরকার পরিবর্তন হলেও সংবিধানের অধীনে সরকার শপথ নিয়েছে। সংবিধান পরিবর্তনের কোনো ক্ষমতা নেই এই সরকারের। একমাত্র করণীয় কিছু অপরিহার্য সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। সরকারের কিছু অর্বাচীন অংশীজন অসতর্ক কথনের মাধ্যমে সরকারকে বিব্রত না করা শুভ হবে। প্রযুক্তির বিশ্বায়নের যুগে কেউ কিছু করে নেপথ্যে থাকার সুযোগ সীমিত। যত দিন যাবে অনুসন্ধানী চোখে সবকিছুই ধরা পড়বে। ক্ষমতা প্রত্যাশী রাজনৈতিক দলগুলো অস্থির হয়ে ওঠার আগেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব পক্ষকে সম্পৃক্ত রেখে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা সমীচীন। বিতর্কিত বিষয়গুলো নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেওয়া সমীচীন হবে। কীভাবে সরকার জুলাই আগস্টের হত্যাকাণ্ড, লুটপাট নিরপেক্ষভাবে বিচার করে তার ওপর নির্ভর করবে সরকারের অস্তিত্ব এবং স্থায়িত্ব। বাংলাদেশের প্রভাবশালী প্রতিবেশী ভৌগোলিক কারণে দেশের স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ফ্যাক্টর ভুলে গেলে চলবে না। এ বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে সচেতন থাকতে হবে। স্বাধীনতা আন্দোলন, সংগ্রামের মীমাংসিত ইতিহাস নিয়ে যত কম বিতর্ক সৃষ্টি করা যায়, ততই মঙ্গল।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)