অবৈধদের বহিষ্কারে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরিকল্পনা ট্রাম্পের


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 20-11-2024

অবৈধদের বহিষ্কারে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরিকল্পনা ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ঘোষণা করেছেন যে, তিনি তার ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং সামরিক সম্পদ ব্যবহার করতে প্রস্তুত রয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কতটুকু কর্তৃত্ব আছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। ট্রাম্প গত ১৮ নভেম্বর সোমবার তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফরমে একটি পোস্টে এ ঘোষণা দেন। পোস্টটি রক্ষণশীল গ্রুপ জুডিশিয়াল ওয়াচের প্রেসিডেন্ট টম ফিটনের একটি পোস্টের প্রতিক্রিয়া হিসেবে তিনি লিখেন। ফিটন ৮ নভেম্বর লিখেছিলেন যে রিপোর্টে দেখা গেছে আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসন ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে প্রস্তুত এবং সামরিক সম্পদ ব্যবহার করবে’ তার ‘গণনির্বাসন’ প্রচেষ্টায়। ট্রাম্প জবাব দেন: ‘সত্য’!!!

এই বিবৃতি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের পরিকল্পনা সম্পর্কে সবচেয়ে কঠোর বার্তা। এই প্রচেষ্টা অধিকারকর্মীদের নিন্দা উস্কে দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড় নির্বাসন অভিযান’ পরিচালনার পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, বিশেষ করে এটি কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ক্ষমতার সীমা কতটুকু। তবে রিপাবলিকান নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন ফেডারেশনের সিনিয়র ফেলো অ্যারন রেইচলিন-মেলনিক গত ১৮ নভেম্বর সোমবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনের অধীনে প্রেসিডেন্টরা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন এবং জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। ‘নির্বাসনের জন্য সামরিক ব্যবহার’ সেই নির্দিষ্ট বিষয়গুলোর মধ্যে একটি নয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন প্রথম মেয়াদের চেয়ে তার দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। নতুন মেয়াদে তার লক্ষ্য শুধু সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে থাকা অভিবাসীদের আটক ও বহিষ্কার প্রক্রিয়ায় আরো সক্রিয় হওয়া। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন পেন্টাগনের তহবিল ব্যবহারের জন্য জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার কথা বিবেচনা করছে। এই জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার ফলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের খরচ প্রতিরক্ষা তহবিল থেকে যোগান দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এর আগেও ট্রাম্প প্রশাসন এই পদক্ষেপ নিয়েছিল, যা আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। আদালত তার পদক্ষেপ বাতিল করেন।

এর সাথে ‘মেক্সিকোতে থাকুন’ নামে পরিচিত কর্মসূচি পুনরায় চালু করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এই নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা করা অভিবাসীদের মেক্সিকোতে অবস্থান করতে হবে যতক্ষণ না তাদের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এটি একদিকে যেমন সীমান্ত এলাকায় চাপ বাড়াবে, অন্যদিকে অভিবাসীদের জন্য মানবিক সংকটের ঝুঁকি তৈরি করবে। বাইডেন প্রশাসনের সময়ে মানবিক প্যারোল কর্মসূচির আওতায় থাকা অভিবাসীদের সুরক্ষা বাতিল করার পরিকল্পনাও রয়েছে তার। মানবিক প্যারোল সুরক্ষা বাতিল করলে বহু মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে ফেলবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের একটি বড় পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে আটক ও মুক্তির বর্তমান প্রক্রিয়ার পরিবর্তন। বর্তমানে সীমিত সম্পদের কারণে অনেক অভিবাসীকে প্রাথমিকভাবে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে নতুন পরিকল্পনায় এটি বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নতুন নীতিমালার আওতায় অভিবাসীদের বাধ্যতামূলকভাবে আটক রাখা হবে। এটি ব্যাপক বহিষ্কারের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার একটি অংশ। এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নে নতুন আটক কেন্দ্র স্থাপন এবং মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোতে বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া বাইডেন প্রশাসনের দ্বারা বন্ধ হওয়া পরিবার আটক কেন্দ্রগুলো আবার চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা সত্ত্বেও অভিবাসী পরিবারগুলোকে একত্রে আটক রাখা হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের এ নীতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কংগ্রেসের মাধ্যমে নতুন অর্থায়ন অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকায়, জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে পেন্টাগনের তহবিল ব্যবহার করার পরিকল্পনা বিবেচনা করা হচ্ছে। পূর্বে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যা আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি কারাগার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কোর সিভিক এ নীতিগুলোর বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যেই বাড়তি আটক সুবিধা তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এ পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অভিবাসন নীতিতে সুপরিচিত ব্যক্তিত্বরা। টম হোম্যান, যিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে অভিবাসন নীতির একজন মূল রূপকার ছিলেন, নতুন প্রশাসনের পরিকল্পনার কেন্দ্রে রয়েছেন। তিনি আগের প্রশাসনের সময় বিতর্কিত পারিবারিক বিচ্ছেদ নীতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

স্টিফেন মিলার, যিনি অভিবাসন নীতিতে তার কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত, এবারও ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালা খসড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এছাড়া দক্ষিণ ডাকোটার গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েমকে নতুন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে এই নীতিগুলো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হতে পারে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই এই পরিকল্পনাগুলোকে ‘অমানবিক’ হিসেবে অভিহিত করেছে। বিশেষ করে ‘মেক্সিকোতে থাকুন’ নীতি এবং পরিবার আটক কেন্দ্র পুনরায় চালুর পরিকল্পনা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

এছাড়া অভিবাসন আইনে কঠোরতা আরোপ এবং নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নীতিমালা বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টাকে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ১৫ লাখের বেশি অভিবাসীকে বহিষ্কার করেছিলেন। যদিও এই সংখ্যা বারাক ওবামার প্রথম মেয়াদের ২৯ লাখ বহিষ্কারের তুলনায় অনেক কম।

ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদেও প্রায় ১৯ লাখ অভিবাসীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তবে করোনাভাইরাস মহামারির সময় চালু হওয়া ট্রাম্পের সীমান্ত নীতির আওতায় যাদের সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাদের সংখ্যা এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত নয়। এই নীতি বাইডেন প্রশাসনেও দীর্ঘসময় ধরে কার্যকর ছিল।

ট্রাম্প প্রশাসনের এ উদ্যোগ তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে একটি বড় পদক্ষেপ হলেও এর সামাজিক ও মানবিক প্রভাব গভীরভাবে অনুধাবন করা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসী সম্প্রদায় এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে এই নীতিগুলোর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি অভিবাসীদের জীবনে গভীর সংকট সৃষ্টি করবে এবং দেশজুড়ে বিতর্কিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।

এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারি কারাগার পরিচালনাকারী দুটি বৃহৎ কোম্পানি, জিইও গ্রুপ এবং কোর সিভিক, ইতিমধ্যেই এই পরিকল্পনায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জিইও গ্রুপের শেয়ারের দাম ৬৯ ভাগ এবং কোর সিভিকের ৬১ ভাগ বেড়েছে। জিইও গ্রুপের নির্বাহী চেয়ারম্যান জর্জ জোলি বলেন, আমাদের কোম্পানি এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত এবং এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ।

কোর সিভিকের প্রধান নির্বাহী ডেমন হাইনিঙ্গার জানিয়েছেন, কোম্পানির সিস্টেমে ভবিষ্যতের চাহিদা মেটাতে ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত ১৮ হাজার খালি শয্যা রাখা হয়েছে।

জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরিকল্পনা এবং প্রতিরক্ষা তহবিল ব্যবহার অভিবাসন ইস্যুকে আরো বেশি রাজনৈতিক এবং বিতর্কিত করবে। বেসরকারি কারাগার কোম্পানিগুলোর ভূমিকা এবং মুনাফা বৃদ্ধি এই বিতর্ককে আরো জটিল করবে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং সমালোচকরা এই নীতিগুলোকে ‘অমানবিক’ এবং ‘বৈষম্যমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। এর পাশাপাশি আইনি চ্যালেঞ্জ এবং অর্থায়নের প্রতিবন্ধকতা নীতিগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)