আমেরিকার দিকে তাকিয়ে আওয়ামী লীগ


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 06-11-2024

আমেরিকার দিকে তাকিয়ে আওয়ামী লীগ

এবার আমেরিকার দিকে তাকিয়ে এখন আওয়ামী লীগ। দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা চেয়ে আছে আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফলে দিকে। তাদের আশা আমেরিকার নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাাম্প বিজয়ী হলে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে। দেশ ত্যাগে ধাবিত হবে। গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে মাঠ থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

অতীতে কী বলতেন আ’লীগ নেতারা

৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার আগে বিভিন্ন সময়ে রাজপথে প্রধান বিরোধী দলের প্রতি টিটকারীর ছলে আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য ছুড়ে দিতেন। হাশি-তামাশা করতেন বিএনপি’র আন্দোলন ও বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নিয়ে। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে প্রায়ই বলতে শোনা যেতো বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে। কখন নিষেধাজ্ঞা আসবে কখন ভিসানীতি আসবে এসব আশায় বিএনপি আমেরিকার দিকে তাকিয়ে আছে বলে মন্তব্য করতেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি তাকিয়ে আছে আমেরিকার দিকে‒ কখন নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি দেবে তার আশায়। তাকাতে তাকাতে চোখের পাওয়ার কমে গেছে। এখন আর কিছু দেখতে পায় না। আর আওয়ামী লীগ তাকিয়ে আছে দেশের জনগণের দিকে।’

অন্যদিকে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মির্জা ফখরুল সাহেবের বক্তব্যে মনে হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান যেমন ইসরায়েলকে সাহস জোগাচ্ছে, বিএনপিকেও তেমনই সাহস জোগাচ্ছে। দুটোর মধ্যে মিল আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিএনপির আন্দোলনে কেউ সমর্থন জানায়নি। তিনি বলেন, ‘কাক যেমন কখন কে খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলল, সে দিকে তাকিয়ে থাকে, মির্জা ফখরুল সাহেবরাও তেমন পাশ্চাত্যের দিকে তাকিয়ে আছেন।

জনগণের ওপর আস্থা না রেখে বিএনপি বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে থাকে বলে মন্ত্রব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ঢাকা-২ আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। অন্যদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছিলেন, বিএনপি জনসম্পৃক্ততাহীন ও নেতৃত্বহীন হয়ে এখন বিদেশি প্রভুর দিকে তাকিয়ে আছে। জনগণ তাদের থেকে দূরে সরে গেছে। তাদের দলে কোনো নেতৃত্ব নেই। তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দন্ডিত আসামি তারেক রহমান লন্ডনে বসে ভার্চ্যুয়ালি সন্ত্রাসীদের নিয়ে কমিটি দেয়। সে নিজে একজন সাজাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী। তাদের দলের চেয়ারপার্সন একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাই তারা এখন বিদেশি প্রভুর হাত ধরে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে।

আর এখন যা বলছেন আ.লীগ নেতারা

সে আওয়ামী লীগ নেতাদের এখন কোথাও খোঁজ মিলছে না। কেউ আছেন কারাগারে, কেউ বা আছেন আত্মগোপনে। তবে দলটির সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভের মুখে ভারতে পালিয়ে যান। ভারতে তিনি এখন কোথায়, কীভাবে আছেন তা জানিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে দেশটির গণমাধ্যম দ্য প্রিন্ট। এতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশটির সরকারের ব্যবস্থাপনায় নয়াদিল্লির লুটিয়েন্সেস বাংলো জোনের একটি নিরাপদ বাড়িতে বসবাস করছেন। তবে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে ফোনালাপে দলকে নিয়ে বলতে শোনা যায় নানান ধরনের আশার বাণী। কর্মীদের কেউ কেউ নেত্রীতে এখন আশ্বস্ত করে বলেন, আমেরিকার নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাাম্প বিজয়ী হলে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পড়বে। সাথে সাথে বাংলাদেশেও শেখ হাসিনা ঢুকে পড়বেন। এর পাশাপাশি পালিয়ে থাকা নেতাকর্মীরাও ঝাঁপিয়ে পড়বে, মুহূর্তে ছুড়ে ফেলে দেবে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কেননা নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালীন সময়ে ট্রাম্প তাঁর এক্স বার্তায় ভারতকেও টেনে এনেছেন। বলেছেন, ভারত ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর ভালো বন্ধু। বিশ্লেষকদের মতে, এমন বার্তাতেও বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ বড় ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। আর এসব কারণে দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আশায় বুক বেধে আছে আমেরিকার নির্বাচন ফলাফলের দিকে। 

এমন গুজবে মুখ খুলতেই হলো

অবশ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন ধারণা বদ্ধমূলের পেছনে অনেক ব্যাখ্যাও দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের মাথাব্যথা নিয়ে যাঁরা উদ্বিগ্ন, অনেকেই মনে করেন সেখানে বড় ভূমিকা রাখে দেশটির অন্যতম মিত্র ভারত। এক্ষেত্রে ভারতকে চটিয়ে বাংলাদেশে অনেক কিছু করতে চাইলেও বাদ সাধে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সবচেয়ে আস্থাভাজন শেখ হাসিনাকে হারিয়ে এবার ভারত বাংলাদেশের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিতে চাইলেও সেটা আটকে আছে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের কারণে। তবে বর্তমানে এমন পরিস্থিতি পাল্টে যাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হয়ে এলে-এমন ধারণা থেকে এখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আমেরিকার দিকে তাকিয়ে আছে। এসব আলোচনা নিয়ে বাংলাদেশে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, মুখ খুলতে হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কেরক্ষত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। কারণ হিসেবে তিনি জানান, একজন বিশ্বনেতা হিসেবে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে উভয় দলের (যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টি) জ্যেষ্ঠ নেতাদের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে। প্রেস সচিব আরো জানান, ‘দুই দলেই তাঁর (অধ্যাপক ইউনূস) বন্ধু আছে। সম্পর্ক অনেকটাই নির্ভর করে ব্যক্তিগত যোগাযোগের ওপর। অধ্যাপক ইউনূস একজন বিশ্বনেতা। সুতরাং কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন নির্বাচনে যিনিই জয়ী হোন না কেন, আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।’

শেষ কথা..

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু আলোচনা চলছে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। এই নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলের দৃষ্টি এখন মার্কিন নির্বাচনের দিকে। ভোটে ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি কমলা হ্যারিস জিতবেন তা নিয়েই এখানে একেক দলের আগ্রহ একেক রকমের। আওয়ামী পন্থী সমর্থকরা আশা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প্রের বিজয়। অন্যরা তাদের রাজনৈতিক কারণেই কমলার প্রতি ঝুকে আছে। অন্যদিকে সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেনো এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প বা আমেরিকার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকাকালীন এ-ই আওয়ামী লীগ সরকারতো বীর দর্পে বলে বেড়াতেন ‘বিএনপি তাকিয়ে আছে আমেরিকার দিকে‒ কখন নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি দেবে তার আশায়। তাকাতে তাকাতে চোখের পাওয়ার কমে গেছে। এখন আর কিছু দেখতে পায় না। আর আওয়ামী লীগ তাকিয়ে আছে দেশের জনগণের দিকে।’ অথচ জনগণের দিকে তাকিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের এখন সেই হুঙ্কার কই? জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন বাংলাদেশের জনগণ বাদ দিয়ে শুধু দেশে না, বিদেশের মাটিতে আশায় দিন গুণছেন। কেননা খবরও বের হয়েছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানকে ট্রাাম্পের সঙ্গে সখ্য বাড়াতে লবিস্ট ফার্ম হিসেবে নিয়োগ করেছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের বিভিন্ন সমাবেশে গুটিকয়েক যে বাংলাদেশিরা যোগ দেন, তাঁদের অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। ফলে এখন দেশের ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ-ই এখন আমেরকিার দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ গণমাধ্যমের খবরেই আরো জানা গেছে যে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি আওয়ামী সমর্থকদের এখন অনেকে মনে করেন, শেখ হাসিনা সরকার পতনের জন্য বড় ভূমিকা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। বিশেষ করে বাইডেনের বর্তমান সরকারের ওপর তাদের ক্ষোভ বেশি। তাই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনে দিতে পারে আমেরিকাই-এমনটাই এখন বদ্ধমূল দলটির শীর্ষ থেকে তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে। 


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)