নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রশাসনে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। উচ্চপদস্থ দুই কর্মকর্তা- ফার্স্ট ডেপুটি মেয়র শীনা রাইট এবং ডেপুটি মেয়র ফিল ব্যাঙ্কস গত ৭ অক্টোবর সোমবার পদত্যাগ করেছেন। এই পদত্যাগগুলো সিটি হলকে আচ্ছন্ন করে ফেলা ক্রমবর্ধমান ফেডারেল দুর্নীতি তদন্তের ঝড়ের মধ্যে এসেছে এবং মেয়র অ্যাডামসের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শীনা রাইট, যিনি সিটির ফার্স্ট ডেপুটি মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, ৭ অক্টোবর সোমবার তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। সিটি হলের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তার শীর্ষ সহকারীদের একজন তার পদে নিযুক্ত হতে পারেন। তদন্তের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রাইটের পদত্যাগকে প্রশাসনের মধ্যে একটি বৃহত্তর পুনর্গঠনের অংশ হিসাবে দেখা হচ্ছে।
ফিল ব্যাঙ্কস, যিনি জননিরাপত্তা বিষয়ক ডেপুটি মেয়র এবং মেয়র অ্যাডামসের দীর্ঘদিনের বন্ধু, গত সপ্তাহান্তে পদত্যাগ করেন। ব্যাঙ্কসের পদত্যাগ ফেডারেল দুর্নীতি তদন্তের পর আসে, যা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সিটি হল কর্মকর্তার ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে। এনওয়াইপিডির প্রাক্তন প্রধান ব্যাঙ্কস অ্যাডামস প্রশাসনের জননিরাপত্তা প্রচেষ্টায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তবে মেয়রের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং ক্রমবর্ধমান তদন্তের মুখে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন ।
এই পদত্যাগগুলো আসে মোহাম্মদ বাহির পদত্যাগের পরে, যিনি অ্যাডামস প্রশাসনের কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স ইউনিটে কাজ করতেন। বাহির বিরুদ্ধে ২০২১ সালের মেয়রের প্রচারণায় অবৈধ অনুদানের জন্য ফেডারেল তদন্তের সাথে সম্পর্কিত সাক্ষী প্রভাবিত করা এবং প্রমাণ ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়েছে। নিউইয়র্কের সাউদান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি উইলিয়ামসের মতে, বাহি নাকি ফেডারেল তদন্তকারীদের কাছে সাক্ষীদের মিথ্যা বলার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং প্রমাণ ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলেন, যার মধ্যে একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ মুছে ফেলা অন্তর্ভুক্ত।
চলমান ফেডারেল তদন্ত মেয়র অ্যাডামসের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ তৈরি করেছে, যিনি বর্তমানে এই তদন্তগুলির সাথে সম্পর্কিত ফৌজদারি অভিযোগের সম্মুখীন। এই পরিস্থিতি একাধিক পদত্যাগের দিকে নিয়ে গেছে, যা তার প্রশাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সিটি হল আরও ঘটনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং মেয়র অ্যাডামসকে আইনগত চ্যালেঞ্জগুলির পাশাপাশি তার প্রশাসনের প্রধান কর্মকর্তাদের পদত্যাগের কারণে সৃষ্ট নেতৃত্বের শূণ্যতা মোকাবেলা করতে হবে।
মেয়র এডামসের প্রাক্তন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাহি সাক্ষীকে মিথ্যা বলার জন্য বলার অভিযোগে অভিযুক্ত। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ৮ অক্টোবর ফেডারেল প্রসিকিউটরদের মতে, নিউইয়র্ক সিটি হলের প্রাক্তন কমিউনিটি বিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাহি ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার সাক্ষী প্রভাবিত করা এবং প্রমাণ ধ্বংসের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। অ্যাটর্নি উইলিয়ামস ঘোষণা করেন, মোহাম্মদ বাহি, যিনি অ্যাডামস প্রশাসনের কমিউনিটি বিষয়ক ইউনিটে কাজ করতেন, তিনি একটি ফেডারেল তদন্তের সাথে জগিত সাক্ষীদের মিথ্যা বলার নির্দেশ দেন এবং প্রমাণ ধ্বংস করেন। অ্যাটর্নি উইলিয়ামস এক বিবৃতিতে বলেছেন, আজ উন্মোচিত অভিযোগগুলো যে কোনো ফেডারেল তদন্তে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টার গুরুত্বের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ রাখে না, বিশেষ করে যখন এটি একটি সরকারি কর্মচারির দ্বারা পরিচালিত হয়। সত্য উদঘাটন এবং যেখানেই প্রমাণ আমাদের নিয়ে যায়, সেখানে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি আমাদের অটুট।
তদন্তকারীরা অভিযোগ করেছেন, মোহাম্মদ বাহি একজন অজ্ঞাতনামা সিটি কর্মকর্তার জন্য তহবিল সংগ্রহের আয়োজন করেছিলেন, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। ঐ অনুষ্ঠানে চারজন অজ্ঞাতনামা নির্মাণ কোম্পানির কর্মচারি নিজেদের নামে অর্থ দান করেছিলেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অর্থ প্রদান করেছিলেন ঐ কোম্পানির সিইও। এ ধরনের অনুদানকে প্রায়ই স্ট্রো কন্ট্রিবিউশন বলা হয়। প্রসিকিউটররা বলেন, স্ট্রো কন্ট্রিবিউশন গ্রহণ ফেডারেল আইনের লঙ্ঘন করতে পারে যখন- রাজনৈতিক প্রচারণায় স্ট্রো কন্ট্রিবিউশন সম্পর্কে সরকারি সংস্থার কাছে মিথ্যা বিবৃতি দেয়। বাহি এফবিআইয়ের চলমান তদন্তে বাধা দেওয়ার জন্য একাধিক সাক্ষীকে প্রভাবিত করা এবং প্রমাণ ধ্বংস করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও, এফবিআই এজেন্টরা বাহির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তার ফোন জব্দ করার সময় তিনি সিগনাল অ্যাপ্লিকেশন মুছে ফেলেন বলে অভিযোগ, যা তিনি সিটি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যবহার করতেন।