হঠাৎ করেই স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বাংলাদেশের বেশ কিছু জেলা প্লাবিত হয়েছে। এমন ভয়াবহ বন্যা বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রতিককালে দেখেনি। যদিও ফেনীসহ বন্যাকবলিত বেশির ভাগ এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নোয়াখালীসহ দু-একটি স্থানে পানি বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। সেসব স্থানে পরিস্থিতি খানিকটা অবনতির দিকে। বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি না সরায় অনেকে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রেই আছেন।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শুকনা খাবার, পানি, ওষুধপত্র বিতরণ অব্যাহত আছে। তবে প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় অনেকে ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। চার দিন পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে যান চলাচল গত ২৪ আগস্ট দুপুর থেকে শুরু হয়েছে। তবে গতি ছিল কম।
বন্যায় এখনো দেশের ১১টি জেলায় ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দি। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ২০ জন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৬ জন, চট্টগ্রামে ৫, নোয়াখালীতে ৩, কক্সবাজারে ৩ এবং ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে একজন করে মারা গেছেন। মৌলভীবাজারে নিখোঁজ আছেন দুইজন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগসংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পানিবন্দি মানুষদের আশ্রয়ের জন্য ৩ হাজার ৬৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র্র খোলা হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় ১১ জেলায় ৭৪৮টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
মাত্র ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পারিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই কয়েকদিনের মধ্যেই বন্যার কবলে পড়লো বাংলাদেশের মানুষ। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেখানে কাজ শুরুর কথা, সেটাও তারা পারছেন না। একদিকে নতুন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে, অন্যদিকে বন্যা নিয়ে আরেক সমস্যায় পড়ছে তারা। তবে তাদের কাজ সহজ করে দিয়েছে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা। সেই সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা করেছেন। তারা একসঙ্গে বন্যার্তদের সহযোগিতায় নেমে পড়েছেন। ঐক্য এবং মনোবলের যে শক্তি, সে শক্তির কাছে বন্যাও পরাজিত হয়েছে। দেশের মানুষের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বন্যার্তদের সহযোগিতায় নেমে পড়েছেন। বন্যার্তদের সহযোগিতায় প্রবাসের মাদার সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি, ফেনী সমিতি, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ব্যক্তি বন্যার্তদের সহযোগিতায় অর্থ সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রেরণ করেছেন এবং করছেন। আবার কেউ কেউ বা কোনো কোনো সংগঠন নিজ নিজ এলাকার সংগঠনের পক্ষ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তাদের এলাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আবার নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদ কমিটিও অর্থ সংগ্রহ করছেন এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন। গত ২৩ আগস্ট নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদে অর্থ সংগ্রহ করা হয় এবং বন্যায় যারা নিহত হয়েছে, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়।
আশা চ্যারিটি ফাউন্ডেশন
দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ালেন নিউইয়র্কে জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান আশা গ্রুপের কর্ণধার আকাশ রহমান। এবার আশা চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ালেন তিনি। তিনি নিজে অর্থ প্রদান করেছেন। পাশাপাশি তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকতা-কর্মচারীদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ তুলে দেশে পাঠিয়েছেন। গত ২৩ আগস্ট শুক্রবার জুমার নামাজের পর সবাইকে নিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা কাজী মারুফ, সাংবাদিক ড. ওয়াজেদসহ অনেকেই।
জনপ্রিয় অভিনেতা কাজী মারুফ আকাশ রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তিনি নিজেও সহযোগিতা করেছেন বলে জানান।
সাংবাদিক ড. ওয়াজেদের মতে, মানুষের প্রয়োজনে মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। আকাশ রহমানের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।