তারেকের চালে ভেস্তে গেলো জয়ের কূটকৌশল


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 14-08-2024

তারেকের চালে ভেস্তে গেলো জয়ের কূটকৌশল

দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যে কূটকৌশল নিয়েছিল তা ভণ্ডুল করে দিয়েছেন আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নির্বাচনের যথাযথ পরিবেশ তৈরির জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে সময় দেয়ার পরিষ্কার মেসেজ দেয়ার মধ্য দিয়ে তারেক রহমান আওয়ামী লীগ সভাপতির ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সেই কূটকৌশল ভেস্তে গেলো। এসব তথ্য জানা গেছে বর্তমানে পটপরিবর্তনের রাজনৈতিক মাঠ থেকে। 

কি বলেছিলেন জয়

দ্রুত নির্বাচন না দিলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। অন্তর্বর্তী সরকার ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতার শাসনকে’ সুযোগ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বিএনপির সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় এসব কথা বলেছেন।

কেনো এই আহবান জয়ের?

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দুপুরে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে চড়ে দেশ ছাড়েন তিনি। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও দেশ ছেড়েছেন । সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ও দেশ ছেড়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি অবসান ঘটে যায় আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনের। আর পতনের এক মাস না যেতেই দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের আহবানকে বিদেশের মাটিতে বসে একধরনের যড়যন্ত্র ও কূটকৌশল হিসাবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন এমন আহবানের মাধ্যমে বিএনপি’কে দিয়ে গোপন ফাদ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। 

কি সেই ফাঁদ

রাজনৈতিক মাঠে ভেসে বেরাচ্ছে যে, সদ্য ক্ষমত্যাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার তাদের রাজনৈতিক মেধা দিয়ে বুঝে ফেলেছে তাদের দল সর্বকালের সেরা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এখান থেকে রক্ষা পেতে দলকে দ্রুত মাঠে নামতে হবে। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন আগেই ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। আর তাই এখনই মাঠে নেমে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনই হবে ঝুকিপূর্ণ। একারণে দেশে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরকার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আয়োজন করা হলে দলটির ধারণা আওয়ামী তাতে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে। আর সে সুযোগে পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের অনুকূলে চলে যাবে বলে তাদের ধারণা। আশা করছে নির্বাচনী প্রচারণার ডামাডোলে হয়তবা ছাত্র-জনতার সেই গৌরবময় ঐতিহ্য মানুষের মন থেকে উড়ে যাবে। আর সে-ই সুযোগটি লুফে নিবে আওয়ামী লীগ। কেননা রাজনৈতিক মাঠ প্রশাসন তো এখনো সদ্য গদিচ্যুত আওয়ামী লীগেরই করায়াত্তে। আর সে কারণেই দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। 

যেভাবে ভেস্তে গেলো

সজীব ওয়াজেদ জয়ের এমন কৌশলটি পুরোপুরি ভুন্ডুল করে দিলো বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে পরামর্শ করেই বিএনপি’র গত ১২ আগস্ট সোমবার একটি সিদ্ধান্ত নেয়। নির্বাচনের যথাযথ পরিবেশ তৈরির জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দেয়ার কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি। গত সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে দলের এই ধরনের অবস্থানের কথা জানান বিএনপির নেতারা।

শেষ কথা

২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের কাছে পরাজয় বরণ করে নেয় আওয়ামী লীগ। কিন্ত ২০০৯ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারো ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে জয়লাভ করে তারা। সব মিলিয়ে পরপর চারবার সরকার গঠন করে দলটি। যদিও ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনই ছিল ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধ। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনও মেনে নেয়নি। কিন্তু একের পর এক বির্তকিত নির্বাচন করে দলটি জনসমর্থনের ভীত তৈরি করতে না পারলেও রাষ্ট্র ও প্রশাসনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করে গেছে। আর সেজন্য বিএনপি’র ভাবনায় আছে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের কাঠামোগত সংস্কার দরকার। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার আনতে হবে। তা না হলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রায় দেড় যুগের শাসনের অবসান হলেও মাঠে শুধু বিএনপি কেনো, কোনো দলই কিছু করতে পারবে না। আর এমন কূটকৈৗশল টের পেয়েই দ্রুত নির্বাচন দেয়ার দাবি থেকে সরে এসেছে বিএনপি । অবশ্য সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে সব দলগুলোর নেতারা একিই সুরে কথা বলেছে। বলেছেন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে অর্ন্তবতীকালীন সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দিতেই হবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)