খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে ব্যাপক আলোচিত ইউনাইটেড হাসপাতালের নাম। বিএনপি চেয়ারপারসন যখন দণ্ড নিয়ে কারাগারে এবং সেখানে প্রচণ্ড অসুস্থ হন, তখন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা গুলশানস্থ ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যু তুলেই ওই ইচ্ছার অবতারণা। এমনকি খালেদা জিয়া নিজেও ইউনাইটেড হাসপাতালে তার চিকিৎসা হোক এমন অভিপ্রায় ব্যক্ত করে বলে তার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সেটা দেয়নি। তাকে শেষ পর্যন্ত সরকারের পছন্দের পিজি হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) এবং পর্যায়ক্রমে ইউনাইটেডের পরিবর্তে অ্যাপোলে হাসপাতাল যা কনভার্ট হয়ে বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে (রূপান্তরিত) চিকিৎসার অনুমোদন মেলে। অদ্যাবধি এভারকেয়ারেই চলছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা। কিন্তু সেই ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ জেড এম হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘২১ জুন শুক্রবার রাতের বেলায়, তখন ঘড়িতে রাত ২টা ৮ মিনিট। ম্যাডামের এ খারাপ অবস্থায় আমি পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে (ইউনাইটেড হাসপাতাল, খালেদা জিয়ার ভাড়া বাসা থেকে পায়ে হাঁটা ৫ মিনিটের পথ) ম্যাডামকে ট্রান্সফার করতে একটি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করেছিলাম। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাকে বলা হলো-তাদের হাসপাতালের নিয়ম হচ্ছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তি হলেই তারা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস দেবে। এটি অ্যাম্বুলেন্স বা জরুরি চিকিৎসার কোনো নিয়ম হতে পারে?’
এছাড়াও খালেদা জিয়ার জন্য দুটি ইনজেকশন চেয়েও পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসক জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘এবং দুটি ইনজেকশনের জন্য অনুরোধ করেছি, ইউনাইটেড হসপিটালের ডিউটি ম্যানেজার, চিকিৎসক-দায়িত্বশীলদের কাছে। কিন্তু তা-ও পেলাম না, এটার নাকি নিয়ম নেই। তাদের বক্তব্য ছিল, রোগী তো আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হবে না। অর্থাৎ রোগী যদি তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাহলেই জরুরি চিকিৎসা পাবে, অন্যথায় পাবে না; এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এ ধরনের জরুরি চিকিৎসা ও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা আদৌ আছে কি না?’ জাহিদ বলেন, ‘দেশে তো কোনো নিয়মতান্ত্রিক শাসন নেই, তাই নিয়মনীতির তোয়াক্কা আজকে কোথাও নেই’।
ডা. জাহিদ হোসেনের অভিযোগের প্রসঙ্গে একাধিক গণমাধ্যমে ইউনাইটেড হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
একই সময় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের তিনটি ব্লক ছিল। করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করার পর দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয় এবং সফলভাবে পেসমেকার বসানো হয়েছে। খালেদা জিয়া ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ফ্লাশব্যাক
২০১৮ সনের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে ২ কোটি ১০ লাখ টাকার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পুরনো ঢাকার কারাগারে নেওয়া হয়। তখন বলা হয় জামিন না পাওয়া পর্যন্ত তাকে নাজিউমদ্দিন রোডের এই কারাগারে থাকতে হবে। সেখানেই তিনি দীর্ঘদিন থেকে প্রচণ্ড অসুস্থবোধ করেন। কারণ তিনি আগ থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে ছিলেন আক্রান্ত। তখন তার সুচিকিৎসার দাবি উঠলে তাকে পিজি (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসার অনুমতি মেলে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা করাতে রাজি ছিলেন না খালেদা জিয়ার পরিবার, বিএনপি ও খালেদা জিয়া নিজেও। বহু দেনদরবারেও কাজ হয়নি। এ সময় খালেদা জিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবার ইচ্ছে ছিল গুলশানস্থ ইউনাইটেড হসপিটাল। শেষাবধি সেই পিজিতেই চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। পরবর্তীতে তাকে যখন প্রচণ্ড অসুস্থতার জন্য বাসায় থেকে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হয়। এ সময়ও খালেদা জিয়া ইউনাইটেড হসপিটালে চিকিৎসার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু এবারও অনুমতি দেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত অ্যাপোলো যা পরবর্তীতে রূপান্তরিত এই এভারকেয়ারে চিকিৎসা নিতে শুরু করেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সেই ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ আনলেন, যা চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো মহৎ উদ্যোগে থাকা একটি সেবাদান প্রতিষ্ঠানের নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড।
রুহুল কবির রিজভীর নিন্দা
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহযোগিতা না দিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অমানবিক আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ২৪ জুন সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে স্বেচ্ছাসেবক দলের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন।
এ প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ দেশের সাধারণ মানুষ যদি এখন এই হাসপাতালের (ইউনাইটেড হাসপাতাল) ইট খুলে নিয়ে যায়, তাহলে তাদের করার কিছু থাকবে না। ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া পায়ে হেঁটে কারাগারে গিয়েছিল, আর সেই নেত্রী বের হলেন হুইলচেয়ারে। আজকে তিনি একের পর এক অসুস্থতায় ভুগছেন। এটার অন্য কোনো কারণ নেই। এর নতুন করে অন্য কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে শেষ করার জন্য কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইউনাইডেট হাসপাতালের একজন পাওয়ারফুল পরিচালক ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পিতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সফল ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টু।