রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে ইদানিং অনেক কথাই শোনা যাচ্ছে। কারো ভাষা অনেক কঠোর, আশঙ্কাজনকভাবে তা মাত্রা ছাড়িয়েও যাচ্ছে। কারোর বক্তব্য বা মন্তব্যের মধ্যে বলা যায় দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আশার বাণীও মিলছে না। আছে নানান শঙ্কা আর হতাশা ও ষড়যন্ত্রের আভাস।
আবারও নতুন কর্মসূচি
পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতির বিধান জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনসহ সাত দল আবারও মাঠে নেমেছে নতুন কর্মসূচি নিয়ে। যুগপৎ আন্দোলনের এই কর্মসূচি অংশ হিসেবে ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা শহর জুড়ে মানববন্ধন করে। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন । ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে মৎস্য ভবন হয়ে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মানববন্ধন করে তারা। আর এর পাশাপাশি তারা ১৫ অক্টোবর দেশের সব জেলা শহরে মানববন্ধন। এনিয়ে ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, গণমিছিল, স্মারকলিপি দেওয়ার পর সরকারের মধ্যে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে সংবেদনশীলতা দেখা যাচ্ছে না। ১৪ অক্টোবর ঢাকায় এবং ১৫ অক্টোবর সব জেলায় মানববন্ধন করা হবে। অন্যদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণ রাজপথ ছাড়বে না।
জামায়াতের নতুন আওয়াজ
এদিকে পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতির বিধান জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে মাঠে নামার মাঝে জামায়াতের নতুন আওয়াজ ভাবাচ্ছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলকে। কেননা একটি দাবির ফয়সালা হতে না হতেই নতুন আওয়াজ দিলো জামায়াত। এখন জামায়াত বলছে বা অভিযোগ করা শুরু করেছে ‘লেভেল প্লেয়িং নিয়ে। মাত্র কয়েকদিন আগে জাতীয় নির্বাচনের আগে এখন পর্যন্ত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ)’ নিশ্চিত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও দায়ী করেছেন তিনি। অথচ লুকানো নয়, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন উপহার দিতে চান উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন আশ্বস্ত করেছেন। বলেছেন, আমরা একটি স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই, রাতের অন্ধকারে গোপন কোনো নির্বাচন দিতে চাই না। আমরা চাই এমন একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নির্বাচন, যা সবাই নিজের চোখে দেখতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভোটারদের জন্য এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যাতে প্রতিটি বাংলাদেশি ভোট দিতে পারে।
বিএনপি’র কণ্ঠে আশঙ্কা
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে ২০২৬ সালে ত্রয়োদশ নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে যখন শক্ত অবস্থান অন্তর্বর্তী সরকারের, তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কেনো আশঙ্কা প্রকাশ করে একথা বললেন? তিনি বলেছেন, সংস্কার কমিশন নয়, বরং দুয়েকটি রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতির কথা বলে আন্দোলন করে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে বলে। এমন বক্তব্য যখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কন্ঠে, তখন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের মুখে অন্য কথা। তিনি বলে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে চুপিসারে ক্ষমতায় আনতে চায়।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ কি বললেন?
বিএনপি’র মহাসচিব যখন এধরনের অভিযোগ করেন তখন মাঠে সন্দেহের আওয়াজ তুলে দিয়েছেন, জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টারা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নির্বাচন হবে স্মরণকালের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু। কিন্তু বাস্তবে দেশের সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাস করছে না।’
আমীর খসরু কি বলছেন
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, কউ জানে না, এমনও অনেক মিটিং হচ্ছে। তিনি যদিও এসব মিটিং নিয়ে বিএনপি কাছে এগুলোর কোনো গুরুত্ব নেই। তবে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় ভেতরে ভেতরে আসলে কি হচ্ছে। কোন সিগন্যালে এসব বৈঠক কারা স্বার্থে হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কেননা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ একটি বিষ্ফোরক মন্তব্যও রাজনৈতিক মহলকে ভাবাচ্ছে। তা হলো তিনি বলেছেন, পৃথিবীর তিনটি শক্তি, দুটি আঞ্চলিক ও একটি বৈশ্বিক শক্তি, এ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। কিন্তু এদের প্রত্যেকের দ্বারাই আমাদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিএনপি নির্বাচন নিয়ে মাঠে নামছে না
২০২৬ মালের ফেব্রুয়ারির কোনো এক সময়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। এটা হতে পারে মাসের প্রথমার্ধে। তবে নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসছে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলাও হচ্ছে ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিততব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না। কিন্তু এতো কিছুর পর প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি কোনো চুপচাপ বসে আছে। মাঠে নেই কেনো কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর নড়াচড়া। নেই কোনো পর্যায়েই দলটির কোনো প্রার্থীর হাকডাক? বিষয়গুলো অনেককে ভাবাচ্ছে, যখন মাঠে শোনা যায় ভিন্ন কথা। আওয়াজ এখন জোরেসোরে তোলা হচ্ছে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।” কিংবা বলা হচ্ছে ‘লেবেল প্লেয়িং তৈরি করে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক(?) নির্বাচনের এর জন্য সামনে শক্ত কোনো পদক্ষেপ আসছে? তৈরি করা হচ্ছে ক্ষেত্র..। প্রশ্ন হচ্ছে এগুলি কি কেবল কথার কথাই। বিশ্লেষকদের মতে, মোটেই না। তবে তাদের অভিমত, এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে কিছুদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে। এখন দেখা যাক শেষ মেষ মাঠের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকে? কেননা রাজনৈতিক মাঠে যখন অনেক রকম আশঙ্কা যখন বাতাস ভারী করা হচ্ছে তখন আলোচনার ঝড়- এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন একি বলছেন? তিনি বলেছেন, এ ইন্টেরিম গভর্নমেন্টও আজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে।