হেফাজত আমিরের বক্তব্যে আদর্শিক ধাক্কা খেল জামায়াত


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 17-09-2025

হেফাজত আমিরের বক্তব্যে আদর্শিক ধাক্কা খেল জামায়াত

জুলাই আন্দলোনে ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকর্মীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর রাজনীতির মাঠে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টারত জামায়াতে ইসলামী। গত একবছরে তাদের প্রভাব ইতিমধ্যে মানুষের মুখে মুখে। অনেকে বলছেনও যে সরকার মূলত জামায়াত কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। যার বড় প্রমাণ জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান নির্বাচনের দাবি করে ২০২৬ এর ফেব্রুয়ারিতে তথা রমজানের পূর্বে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। শেষ পর্যন্ত প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেটাই মেনে নিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। 

ইতিমধ্যে ৩০০ আসনেই প্রার্থী প্রায় চূড়ান্তকরণ ছাড়াও নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ শুরু করে দিয়েছে দলটি। এখন তারা চেষ্টা করছে কয়েকটি ইসলামপন্থী দলকে নিয়ে রাজনীতির মাঠে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের। ইতিমধ্যে পিআর পদ্ধতি নিয়ে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচিও ঘোষণা দিয়েছে দলটি। 

কিন্তু বিষয়টি ভাল চোখে দেখছেন না হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির প্রবীণ ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। সম্প্রতি চট্টগ্রামে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ইসলামের দুশমন। আর, জামায়াত দেওবন্দী কওমী মাদরাসার দুশমন। আল্লাহ না করুন, আমি কসম করে আজকে বলে দিয়ে যাচ্ছি, এই ফেরাউনের জাত যদি কোনোভাবে কখনো সরকারে আসতে পারে, তাহলে দেওবন্দী কওমী ধারা এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ধারার (আলীয়া ও সুন্নিয়াত) মাদরাসার কোনো অস্তিত্ব কোথাও রাখবে না। আমি আজকে সাফ এই কথাটা বলছি। আপনারাই তা দেখবেন। আমি কসম করে বলতে পারি। আল্লাহ পানাহ্ দিন, আল্লাহ আমাদেরকে পানাহ দিন।

আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) হাটহাজারী ডাকবাংলো মাঠে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর উক্ত স্মরণসভায় আলেম ওলামা মশায়েখদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা হারুন ইজহার প্রমুখ।

এদিকে নির্বাচনের মাঠে ব্যাপক শক্তি নিয়ে অগ্রসর হওয়া জামায়াতে ইসলামী মূলত ইসলামকে পুঁজি করেই সাধারণ মানুষকে তাদের সাপোর্টে নিয়ে আসার চিন্তা করছে। জামায়াত মানেই সৎ মানুষের দল। পক্ষান্তরে বিএনপিসহ অন্যন্য দল চাঁদাবাজ, অনেকটাই আওয়াসী লীগের প্রতিচ্ছবি। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে বিএনপিও (একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে) আওয়ামী লীগের মত ফ্যাসিষ্ট হয়ে উঠতে পারে এমন কথাই তারা বলার চেষ্টা করছেন। 

কিন্তু এমন এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে হেফাজতে ইসলামের আমির জামায়াত নিয়ে যে মন্তব্য বা বক্তব্য দিয়েছেন সেটাতে জামায়াত বড় ধরনের এক আদর্শিক ধাক্কা খেল বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ জামায়াত কোরআন হাদিসের আলোকে চলা একটি দল। বাংলাদেশে যেখানে ৯০% ভাগেরও বেশি মুসলমান, সেদেশে ইসলামপন্থী দলসমূহের সমালোচনা করা কঠিন এক কাজ। যেহেতু হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে সঠিক ইসলাম ধর্ম মেনে চলা একটা দল ও যারা মূলত দেওবন্দ, কওমী মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত, সাধারণ মানুষ হেফাজতকে অন্যরকম ভালবাসে। সাধারণ মানুষ মনে করেন সত্যিকারের ইসলাম তথা কোরআন ও হাদিস চর্চা একমাত্র হেফাজত কর্তৃক পরিচালিত ধারায় যে লেখাপড়া সেখানেই হচ্ছে। হেফাজত কোনো রাজনৈতিক দলও না। তাদের রাজনীতি করার তেমন আগ্রহও দেখা যায় না। এমন একটা দলের আমিরের ইসলাম পন্থী একটি দলকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তাতে তোলপাড়। 

ইতিমধ্যে জামায়াত ইসলামী হেফাজতে ইসলামের আমিরের এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। 

জামায়াতে ইসলামীর নাম জড়িয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিবৃতিতে তিনি বলেন, একটি দৈনিকে ১৫ সেপ্টেম্বর সংখ্যার প্রথম পাতায় ‘জামায়াত সরকারে আসতে পারলে কওমি, দেওবন্দি ও সুন্নিয়াত মাদরাসার অস্তিত্ব রাখবে না’ শিরোনামে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অসত্য ও মনগড়া। তার এ বক্তব্যের মধ্যে সত্যের লেশমাত্রও নেই। তার এই বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তার মতো একজন বরেণ্য আলেমের মুখে এমন ভিত্তিহীন মন্তব্য শোভা পায় না। আমি তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও ইসলামি ধারার রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতে ইসলামী দেশে অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করে ইসলামের খেদমত করে যাচ্ছে। জামায়াতের বহু নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষি কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্বীনি খেদমতে নিয়োজিত রয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা বা কর্মী কোনো দিন কওমি দেওবন্দি কিংবা সুন্নিয়াত মাদরাসার বিরোধিতা করেছেন, এমন প্রমাণ নেই।

তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর দুজন মন্ত্রী ক্ষমতায় ছিলেন। তারা কওমি, দেওবন্দি ও সুন্নিয়াত মাদরাসার বিরোধিতা করেছেন- এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবেন না। বরং তারা ওই ধরনের মাদরাসাকে মুক্তহস্তে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর আশঙ্কা অসত্য ও অমূলক। অতএব, এ ধরনের প্রোপাগান্ডা চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।

অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অসত্য ও মনগড়া মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি এবং আশা করছি দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা কর্তৃপক্ষ অত্র প্রতিবাদটি যথাযথভাবে প্রকাশ করে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন করবেন।’


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)